ইতিহাসের একটি অধ্যায় কুমিল্লা বিমান বন্দর: আবার নতুন উদ্যোমে

শান্তনু হাসান খান।।
ইতিহাসের একটি অধ্যায় জড়িয়ে আছে কুমিল্লা বিমান বন্দরকে ঘিরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশ প্রধান জেনারেল আইম্যান হাওয়ার তখন বৃটেনের হিথরো বিমানবন্দরের মাধ্যমে আর পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা বিমান বন্দরের মাধ্যমে বার্মা ও থাইল্যান্ডের দিকে বোমারু বিমানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। সে সময় এই বিশাল বন্দরের মাধ্যমে বোমারু বিমানগুলোকে কুমিল্লা আশপাশে হেঙ্গারগুলোতে লুকিয়ে রেখে যুদ্ধ পরিচালনা করা হত। সেই হেঙ্গারগুলো এখনো কুমিল্লায় ১৯,২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আশপাশে ছড়িয়ে ছিটে আছে।

হেঙ্গারগুলো এখনো দৃশ্যমান- কিন্তু বিমানবন্দরও অনুরূপভাবে চালু রয়েছে। শুধু সময়ের ব্যবধানে এটি পরিপূর্ণতায় রূপ নিচ্ছেনা। কথা গুলো বলছিলেন- বিমানবন্দর গাঁ-ঘেষে এলাকার আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম অলি আহাম্মেদের বড় সন্তান মো: শাহিন আহাম্মেদ। তিনি বিমানবন্দর সম্পর্কে বলেন- সে বৃটিশ আমলে কুমিল্লা বিমান বন্দরকে ব্যবহার করা হতো। এখান থেকে বোমারু বিমানগুলো উঠা-নামা করতো। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমান নিয়োমিত উঠা-নামা করতো।

১৯৯৪ তে যাত্রী কম- এই ওজুহাতে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ই.পি.জেড কে কেন্দ্র করে চাটার বিমান ও হেলিকপ্টার এখনো চলাচল করছে। যখন বিমানবন্দর চালু ছিল সেই সময় এর প্রবেশদ্বার ছিল উনাইশার দিয়ে। যদি এখন পূর্ব দিক অর্থাৎ রাজাপাড়া নেউরা দিয়ে ই.পি.জেড এর ১ নাম্বার গেইট দিয়ে চালু করলে এর প্রবেশ পথ আরো বাড়বে। দক্ষিণদিকে দিশাবণ পর্যন্ত রানওয়ে বর্ধিত করলে পরিপূর্ণ বিমানবন্দর রূপ নিবে।

তিনি বলেন কুমিল্লা বিমানবন্দরের সিগন্যাল ব্যবহার করে সরকার প্রতি মাসে লক্ষ টাকা আয় করছে। এই রুটে আন্তর্জাতিক ৩৫ থেকে ৪০টি বিমান চলাচল করছে করছে বলে এ প্রতি বেদককে শাহিন আহম্মেদ আরো বলেন- কুমিল্লা বিমান বন্দর চালু করতে সব কিছুই আছে শুধু দরকার একটু উদ্যোগ নেওয়া।

এ সব দিক চিন্তাভাবনা করে কুমিল্লা বিমানবন্দরসহ দেশের ৭টি বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

কুমিল্লা বিমানবন্দর ছাড়া বাকি ৬টি বিমানবন্দর গুলো হলো -ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া, শমসেরনগর ও তেজগাঁও বিমানবন্দর। দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের বিকাশ ও যাত্রী পরিবহণ বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কুমিল্লাবাসী দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুর জন্য দাবি জানিয়ে মানববন্ধন,স্মারকলিপি প্রদান ও মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ এবং বিভিন্ন বিমান পরিবহন কোম্পানীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলো।

শাহিন আহাম্মেদ আরো বলেন- এ বিমানবন্দরে সবকিছুই আছে। অথচ শুধু উদ্যোগের অভাবে এখানে বিমান উঠা নামা করে না। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা ইপিজেড স্থাপনের সময় স্টল বিমান সুবিধা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সে ওয়াদা পূরণ হলে কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ বাড়তো এবং আশপাশের দেশে কুমিল্লা থেকেই মানুষ বিমানে ভ্রমণ করতে পারতো।

জানা গেছে, ইতোমধ্যেই কুমিল্লা বিমানবন্দরসহ দেশের ৭টি বিমানবন্দর নতুন করে চালু করা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হয়েছে। বেবিচকের ২০৩০ সালের কর্মপরিকল্পনা এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। আরও জানা গেছে, বর্তমানে এই বিমানবন্দরগুলোর কোনোটিতেই বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করছে না।

আরো জানা গেছে, অনেকগুলো বিমানবন্দরের রানওয়েতে গরু, ছাগলসহ গবাদি পশু অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো কোনো বিমানবন্দরের চারদিকে বাউন্ডারি দেওয়ালসহ কোনো ধরনের নিরাপত্তা চৌকি নেই।

রানওয়েতে ক্রিকেট খেলেন স্থানীয়রা। আবার কোনো কোনো রানওয়েতে বড় গাছ। ঘাস বড় হওয়ায় অনেক রানওয়েও দেখাও যায় না। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত থাকায় রানওয়ের শক্তি পিসিএন (পেভমেন্ট ক্ল্যাসিফিকেশন নাম্বার) নষ্ট হয়ে গেছে। আর সংস্কার না করায় ও পানি জমে যাওয়ায় কোথাও কোথাও রানওয়ের পিস ঢালায় ও ব্লক ভেঙে গেছে।

বেবিচকের পিএন্ডডিকিউ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে ২৮টি বিমানবন্দর রয়েছে। এগুলো ব্রিটিশ সরকারের আমলে তৈরি। সব বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফুটের মধ্যে।

রানওয়েগুলো বর্তমানে যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনায় অনুপযুক্ত। পর্যায়ক্রমে এই রানওয়েগুলোর দৈর্ঘ্য ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার ফুটে উন্নীত করার টার্গেট আছে বেবিচকের।

এছাড়া রানওয়ের পিসিএন ৩০ থেকে ৬০ ফুট করার টার্গেট আছে। তাহলে এটিআর কিংবা ড্যাস-৮ কিউ ৪০০ মডেলের ছোট ছোট যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করা সম্ভব হবে।

কুমিল্লা বিমানবন্দর ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে চালু ছিল। ১৯৯৪ সালে এটি পুনরায় চালু করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় দুই সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অঞ্চলে দ্রুত শিল্পায়নের ফলে বিমান চলাচলের চাহিদা বদলেছে। তাছাড়া এ জেলায় একটি ইপিজেড থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রাজধানী থেকে সহজে সেখানে যেতে পারেন না।

৯০-এর দশকে যখন কুমিল্লা বিমানবন্দর ফ্লাইট স্থগিত করেছিল, তখন যানজট বলতে কিছুই ছিল না।

কিন্তু এখন তিন ঘণ্টা সময়েও ঢাকা থেকে সড়কপথে কুমিল্লা পৌঁছানো যায় না। অথচ ফ্লাইটে মাত্র ২৫ মিনিটে কুমিল্লা যাতায়াতের সুবিধা মিলবে। বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু হলে চাঁদপুর ও ফেনী, নোয়াখালী লক্ষীপুর ও বিবাড়ীয়া অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার আরও ভালো সংযোগ তৈরি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা, ব্যবস্থাপনা, যন্ত্রপাতি, জনবল থাকার পরও শুধু উদ্যোগের অভাবে তিন যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা বিমানবন্দর।

কুমিল্লা বিমান বন্দর সূত্রে জানা যায়- কুমিল্লা বিমানবন্দর এখনো চালু অবস্থাতেই আছে। শুধু বিমান ওঠা নাম করে না। এ বিমান বিন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী সব বিমানকে আশাপথের সিগন্যাল দেয়া হয়। আর এ কাজ করে কুমিল্লা বিমান বন্দর প্রতি মাসে আয় করে বিপুল পরিমান অর্থ। কুমিল্লা বিমান বন্দরে নেভিগেশন ফ্যাসিলিটিজ, কন্ট্রোল টাওয়ার, ভিইচএফ সেট, এয়ার কমিউনিকেশন, যন্ত্রপাতি, ফায়ার স্টেশন, ফায়ার সার্ভিসহ সব সুবিধা রয়েছে।
বাংলাদেশে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ৫টি অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দর এবং ৭টি সট টেক অব ল্যান্ড ল্যান্ডিং (স্টক) বিমান বন্দর রয়েছে। এই ৭টি বিমান বন্দররের মধ্যে কুমিল্লা বিমানবন্দরটি একটি।

কুমিল্লা বিমানবন্দরের পরবর্তী কর্মকান্ডকে চিহ্নিত করে শাহিন আহাম্মেদ বলেন, এই বিমান বন্দর থেকে সরকার ২ থেকে আড়াইকোটি টাকা আয় করে। যা সম্পুর্ন তদারকি করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রতিদিন আমাদের সিগন্যাল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫ থেকে ৪০টি বিমান। এখানে সব আছে শুধু উদ্যোগের অভাবে এখানে বিমান উঠানামা করে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের এখানে ২০ জন কর্মরত রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে একটু উদ্যোগ নিলেই বিমানবন্দরটি সচল করা সম্ভব। এজন্য রানওয়ে মেরামতসহ কিছু কাজ করতে হবে। পাশাপাশি আরও ২০-২২ জন লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। আমরা চাই দ্রুত বিমানবন্দরটি চালু হোক।

পরিশেষে তিনি বলেন একটি দেশের পরিপূর্ণ সামগ্রিক উন্নয়ন যেমন একটি রাজনৈতিক সরকার ছাড়া কেউ করতে পারে না ঠিক তেমনি একটি জেলার পরিপূর্ণ উন্নয়ন করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সেই জেলার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কতটুকু সদ্বিচ্ছা আছে তার উপর। কারণ, নিজ নিজ জেলার প্রতি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে নিশ্চয়ই বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)বা সরকারের অন্য যে কোন কাঠামোর সেই দায়বদ্ধতা নেই এবং থাকার কথাও না। বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেড ও স্থল বন্দরসহ যে কোন বিবেচনায় বিমান বন্দর চালু করা একেবারেই সময়ের দাবী হয়ে উঠছে।

এই বিমান বন্দরটি এখনো বছরে আড়াই কোটি টাকার উপর সিগন্যাল ব্যবহার করে আয় করে। শুধু মাত্র রানওয়েসহ কিছু অবকাঠামো ও কতেক জনবল নিয়োগ দিয়েই এই বিমান বন্দরটি চালু করা যায়। কিন্তু চালু হচ্ছে না। যেই কারণে কুমিল্লা বিমান বন্দরটি চালু হচ্ছে না একই কারণেও হচ্ছে না কুমিল্লাবাসীর প্রাণের ও আবেগের বিভাগ। সব কিছুর মূলে রয়েছে সেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদ্বিচ্ছা। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আজ কুমিল্লার ১১ জন নির্বাচিত এমপি ও ২ জন সংরক্ষিত এমপি এই ১৩জন এমপি মিলে প্রধান মন্ত্রীকে একত্রিত হয়ে বলুক, আমরা কুমিল্লা নামে বিভাগ চাই| আমরা দ্রুত কুমিল্লা বিমান বন্দর চালু সহ কুমিল্লার উন্নয়নে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাক। কুমিল্লা এগুলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page